Cadet College Syllabus: ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবণ্টন
A Comprehensive Guide to the Cadet College Admission Test Syllabus and Mark Distribution for Aspiring Cadets.
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস 2026: শৃঙ্খলা, জ্ঞান আর দেশপ্রেমের এক অনন্য পাঠশালা হলো ক্যাডেট কলেজ। বাংলাদেশের হাজারো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের স্বপ্ন থাকে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে পড়ার। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পথটি বেশ প্রতিযোগিতামূলক। এই কঠিন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রয়োজন সঠিক সময়ে, সঠিক নির্দেশনা মেনে একনিষ্ঠ প্রস্তুতি। আর প্রস্তুতির প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবণ্টন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা।
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস 2026
একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আমি দেখেছি, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও শুধু সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরন না বোঝার কারণে পিছিয়ে পড়ে। অভিভাবকেরাও ঠিক কোথা থেকে, কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করাবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন। এই সকল দ্বিধা দূর করে আপনার সন্তানের প্রস্তুতিকে সহজ ও গোছানো করতেই আমার এই লেখা।
চলুন, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়াটি সহজভাবে বুঝে নিই এবং সফলতার দিকে একধাপ এগিয়ে যাই।
এই লেখায় যা জানবেন
- ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার মোট কয়টি ধাপ ও কী কী?
- লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক নম্বর বণ্টন।
- প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত সিলেবাস ও গুরুত্বপূর্ণ টপিক।
- মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কী কী দেখা হয়?
- প্রস্তুতির সেরা কৌশল এবং কিছু বাস্তবসম্মত টিপস।
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার ধাপসমূহ
Stages of Admission Test; ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা মূলত তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ধাপেই যোগ্যতা প্রমাণ করে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হতে হয়।
১. লিখিত পরীক্ষা (Written Test): এটিই প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মোট ৩০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই পরবর্তী ধাপের জন্য ডাক পায়।
২. মৌখিক/ভাইভা পরীক্ষা (Viva Voce): লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বুদ্ধিমত্তা, স্মার্টনেস, এবং ব্যক্তিত্ব যাচাইয়ের জন্য একটি মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
৩. স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Medical Test): মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে বাছাইয়ের আগে ক্যাডেট কলেজের কঠোর প্রশিক্ষণের জন্য তারা শারীরিকভাবে উপযুক্ত কিনা, তা নিশ্চিত করতে একটি মেডিকেল বোর্ড স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।
লিখিত পরীক্ষার মানবণ্টন: মোট ৩০০ নম্বর
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন মূলত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) কর্তৃক নির্ধারিত ৬ষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই অনুসরণ করে তৈরি করা হয়। পরীক্ষার মাধ্যম বাংলা ও ইংরেজি উভয়ই থাকে, পরীক্ষার্থীরা যেকোনো একটি মাধ্যম বেছে নিতে পারে।
নিচে বিষয়ভিত্তিক নম্বর বণ্টন একটি টেবিলের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো:
বিশেষ দ্রষ্টব্য: গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সম্পূর্ণ সৃজনশীল পদ্ধতিতে হয়। অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও সৃজনশীল এবং বর্ণনামূলক প্রশ্নের মিশ্রণ থাকে।
বিষয়ভিত্তিক বিস্তারিত সিলেবাস
Detailed Subject-wise Syllabus: এখন প্রতিটি বিষয়ের সিলেবাস বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক, যাতে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।
১. গণিত (নম্বর: ১০০)
এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নম্বর তোলার সেরা জায়গা। প্রশ্নপত্র সম্পূর্ণ সৃজনশীল হয়। মূলত দুটি অংশে প্রশ্ন থাকে: পাটিগণিত ও জ্যামিতি।
পাটিগণিত (Arithmetic):
- স্বাভাবিক সংখ্যা ও ভগ্নাংশ (অনুশীলনী ১.১ থেকে ১.৬)
- অনুপাত ও শতকরা (অনুশীলনী ২.১ থেকে ২.৩)
- পূর্ণসংখ্যা (অনুশীলনী ৩.১ থেকে ৩.৩)
- বীজগণিতীয় রাশি (অনুশীলনী ৪.১ থেকে ৪.৩)
- সরল সমীকরণ (অনুশীলনী ৫)
- গুরুত্বপূর্ণ টপিক: ল.সা.গু ও গ.সা.গু, সরলীকরণ, গড়, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, এবং সরল মুনাফা। কথায় লেখা ও অংকে লেখার সমস্যাবলি ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।
জ্যামিতি (Geometry)
- মৌলিক ধারণা (রেখা, কোণ, তল)
- ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ (সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য)
- কোণ (সূক্ষ্মকোণ, স্থূলকোণ, সমকোণ, সম্পূরক কোণ, বিপ্রতীপ কোণ)
- গুরুত্বপূর্ণ টপিক: সম্পাদ্য (রুলার ও কম্পাস ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কোণ, ত্রিভুজ আঁকা) এবং চিত্রসহ বিভিন্ন জ্যামিতিক বিষয়ের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য প্রমাণ।
২. ইংরেজি (নম্বর: ১০০)
ইংরেজিতে ভালো করতে হলে গ্রামার এবং লেখার দক্ষতার ওপর সমান জোর দিতে হবে।
Part A: Grammar (50-60 Marks)
- Parts of Speech (Identification and classification)
- Number & Gender
- Articles (A, An, The)
- Tense (Correct form of verbs)
- Preposition (Appropriate use)
- Voice Change (Active to Passive)
- Sentence (Transformation: Assertive, Interrogative, Imperative, Optative, Exclamatory and Simple, Complex, Compound)
- Punctuation and Capitalization
Part B: Composition (40-50 Marks)
- Seen & Unseen Passage/Comprehension (Answering questions, finding main idea)
- Paragraph Writing (Based on common topics)
- Letter/Application Writing (Formal and Informal)
- Rearranging sentences to make a story.
- Translation (Bengali to English and vice-versa).
৩. বাংলা (নম্বর: ৬০)
বাংলায় ভালো নম্বর পেতে হলে পাঠ্যবইয়ের ওপর দখল থাকা আবশ্যক।
প্রথম পত্র – সাহিত্য (চারুপাঠ):
- NCTB প্রণীত ৬ষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’ বইয়ের সকল গদ্য ও পদ্য।
- কী পড়তে হবে: লেখক/কবি পরিচিতি, শব্দার্থ, পাঠ পরিচিতি, মূলভাব এবং সৃজনশীল প্রশ্নের (জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক) উত্তর।
দ্বিতীয় পত্র – ব্যাকরণ ও নির্মিতি:
- ভাষা ও বাংলা ভাষা, ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব।
- সন্ধি বিচ্ছেদ, সমাস, কারক ও বিভক্তি, লিঙ্গ ও বচন পরিবর্তন।
- বিরাম চিহ্নের ব্যবহার।
- এক কথায় প্রকাশ, বাগধারা, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ।
- নির্মিতি অংশ: ভাব-সম্প্রসারণ, সারাংশ/সারমর্ম, চিঠি/দরখাস্ত লিখন।
৪. সাধারণ জ্ঞান (নম্বর: ৪০)
এই বিষয়টি বিশাল হলেও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ফোকাস করলে ভালো করা সম্ভব।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি (২৫-৩০ নম্বর):
- বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ (ভাষা আন্দোলন থেকে বিজয় পর্যন্ত)।
- ভূগোল (অবস্থান, সীমানা, নদ-নদী, আবহাওয়া)।
- বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক, দিবস, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি।
- বিখ্যাত স্থান ও ব্যক্তিত্ব।
- সরকার ও প্রশাসন (রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়)।
- বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী) সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ও সাম্প্রতিক বিশ্ব (১০-১৫ নম্বর):
- বিভিন্ন দেশের রাজধানী, মুদ্রা ও ভাষা।
- বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সংস্থা (UN, UNICEF, WHO)।
- খেলাধুলা (অলিম্পিক, ফুটবল ও ক্রিকেট বিশ্বকাপ)।
- সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি (পরীক্ষার আগের ৬ মাসের)।
- বুদ্ধিমত্তা (IQ): অনেক সময় সাধারণ জ্ঞানের ভেতরেই কিছু বুদ্ধিমত্তার প্রশ্ন (যেমন – ধারা, সম্পর্ক নির্ণয়, সাদৃশ্য) অন্তর্ভুক্ত থাকে।
মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা: যা জানা জরুরি
- মৌখিক পরীক্ষা (Viva Voce): এখানে প্রার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি, আত্মবিশ্বাস, কথা বলার ভঙ্গি, সাধারণ জ্ঞান এবং মানসিক দৃঢ়তা যাচাই করা হয়। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও প্রশ্ন করা হতে পারে। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাই এখানে মূল চ্যালেঞ্জ।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Medical Test): এটি একটি Pass/Fail পরীক্ষা। সামরিক চিকিৎসকদের দ্বারা গঠিত একটি বোর্ড প্রার্থীর উচ্চতা, ওজন, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং বড় ধরনের কোনো রোগ বা শারীরিক ত্রুটি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে। ক্যাডেট জীবনের কঠোর পরিশ্রমের জন্য প্রার্থী উপযুক্ত কিনা, তাই এখানে দেখা হয়।
প্রস্তুতির সেরা কৌশল
১. পাঠ্যবইকে বাইবেল মানুন: প্রস্তুতির মূল ভিত্তি হলো ৬ষ্ঠ শ্রেণির NCTB বোর্ড বই। প্রতিটি অধ্যায় খুঁটিয়ে পড়ুন।
২. রুটিন তৈরি করুন: প্রতিদিন প্রতিটি বিষয় পড়ার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন এবং তা কঠোরভাবে অনুসরণ করুন।
৩. পূর্বের প্রশ্ন সমাধান করুন: বিগত ৫-১০ বছরের ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ করে সমাধান করুন। এতে প্রশ্নের ধরন ও সময় বণ্টন সম্পর্কে বাস্তব ধারণা জন্মাবে।
৪. লেখার অভ্যাস করুন: পরীক্ষায় সময় সীমিত। তাই দ্রুত ও স্পষ্টভাবে লেখার অভ্যাস করা অত্যন্ত জরুরি। না দেখে লেখার অনুশীলন করুন।
৫. দুর্বলতায় জোর দিন: কোন বিষয়ে আপনি দুর্বল, তা খুঁজে বের করুন এবং সেখানে বেশি সময় দিন। গণিতের সূত্র ও ইংরেজির গ্রামার রুলস প্রতিদিন ঝালিয়ে নিন।
৬. সাম্প্রতিক বিষয়ে চোখ রাখুন: নিয়মিত পত্রিকা পড়ুন, টিভি সংবাদ দেখুন এবং সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি আপ-টু-ডেট বই অনুসরণ করুন।
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন প্রতিযোগিতা, কিন্তু অসম্ভব নয়। সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসই হলো সাফল্যের চাবিকাঠি। সিলেবাস ও মানবণ্টন জেনে methodical প্রস্তুতি নিলে আপনার সন্তানের স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, এটি শুধু একটি পরীক্ষা নয়, এটি একটি ভবিষ্যৎ গড়ার প্রথম ধাপ।
আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-তে ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার পদে চাকরি
[…] আরও পড়ুন: ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার গাইডলাইন… […]
[…] ক্যারিয়ার থেকে পড়ুন: ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার গাইডলাইন… […]
[…] আরও পড়ুন: ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার গাইডলাইন… […]
[…] নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫ গাজীপুর-এর সকল বিস্তারিত তথ্য, যোগ্যতা, দায়িত্ব এবং আবেদন […]
[…] কোর্সের মাধ্যমে কঠোর প্রশিক্ষণের পর ক্যাডেটরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার […]
[…] ভিজিট করুন। আপনার সন্তান কি এবার ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে? প্রস্তুতি […]